রামের দুর্গাপূজা।
(আমার বারো বৎসর বয়সে লিখিত)
(১)
সযতনে ইন্দিবর শ্রী কমলদলে
আনি, রাঘব রাজ মধুবন মাঝে
রাখিলা মৃণাল গণে সযত্ন ভরি।
হৃদয় পঙ্কজ যথা মধুর বিহনে
বিভাসিত, বিহগ গগনে লহরিয়া
আগমনী ছড়াইছে, দিগন্ত প্রান্তরে।
পল্লব রাজি, দ্রুম অতিমন্দ বেগে
চামর ধুলায় যেন কিঙ্কিণীর পদে।
চম্পক, চামেলি, কলি, কুসুম, সুন্দরা,
গন্ধরাজ, নাগেশ্বর, জূথিকা, মৃণালী
মাতিছে হৃদয়ে ভাসি আনন্দাগমনে।
লহরী লহরী উঠে শিহরন জাগি,
লহরিয়া উঠেরে হৃদয় সরোবর।
প্রসূন উদ্যান যথা শ্রী শ্যাম পরশি,
মধুস্বরী বংশী সম কাকলি বিতান
রচিতে অহর্নিশি। মত্ত কোলাহলে
অপরূপ রূপমা শারদ তিলোত্তমা।
রজশুভ্র শুভ্রালোকে কমল কাননে
রাজহংস রাজহংসী করে জলকেলি
মাতি প্রেমরসে। মন্থর মন্দ্র বায়ু
মন্দগতি অতি। বনস্পতি শিহরণ
পত্র দল ডুলে যেন নশ্বর নয়ানে
পড়িছে উড়িয়া। আলুলিত বনরাজি
উচ্ছল আনন্দে উদ্ভাসিত। গুনগুনি
গুঞ্জর ভ্রমরা সাঁচে মধু, পুষ্প বনে।
অপরূপ হাস্য লহরী। আহা মরি!
(২)
হায় দেবী, একি তব নিরুপম লীলা
বিশ্বজননী, মাত হর বিলাসিনী,
সুচারু বদনা, শ্রেষ্ঠা, লম্বোদর মাতেঃ!
হর প্রিয়া, সুভাগা, কামিনী। নম মাতেঃ
অপর্ণা, মহাগৌরী, অমৃত ভাষিণী।
(৩)
বন বেষ্টনী মাঝে পশিলা রাঘব
পূজিতে শ্রীময়ী, দশানন নাশ লাগি
উৎকল মৃন্ময়ী গড়ি পূজিলা, নয়ানে
ছলছলি নেত্রনীর ভাতিল, আনন্দে
বিভোরিল রামাগন মধূর সে যোগে।
"হে যক্ষ,রক্ষ,যম, দেব, দিকপাল!
দশদিকে উর, রক্ষ মহা পূজালয়ে ।
সর্ব সিদ্ধি রক্ষ মোর বনানী বলয়ে।
আদি অনাদি সিক্ত কর ব্রতালয়ে।
শূলপাণি পুর মম অভীষ্ট সাধনা।
অবতর হে ত্রিনয়না দশভূজা,
পরিগ্রহ করি মোহ, মায়াস্বরুপিনী!
তোমারে পূজিব মাতঃ অকাল শরতে,
এক্ষণে যে দেবদ্বার কূন্চিত শন্চূক
সম নিদ্রা আভরণে লুকায়িছে নিজে।
হে মহামায়া, তবে মায়া ত্যজি এবে
অবতর মাতঃ! মোর মনন চিন্তন
সবি সপিয়াছি তোমে, রাজকূল ভুলি।
হে দেবী!রণশ্রী মহিষাসুরমদ্রিনী।
"মরদন কর মা এবে রাবণ অসুরে"
সানন্দী বনদেবী চারুলতা কহে-
"হে নৃপঃ এ আড়ম্বর কিইবা কারণে?
কানন কুসূম সবে প্রফূল্ল যোগে
লহরিয়া উঠিছে সানন্দিয়া ব্যোমে।
ত্রাসি ত্রাসি কপিরাশি পবিত্রতা ভরি
সঞ্চারি আনিছে শোভা মম বন মাঝে
কী কারণ? পদ্মাক্ষ অতি ভক্তি ভরে
পূজিবে কাহারে? মম অমৃত কাননে।
কাহার চরণধূলি পড়িলে শোভিবে
এ সুধাম বনানী? তবে কাহার লাগিয়া
বিগলিত আকুলা এ ধরিত্রী মাঝার?
কে সেই ললিতা আজি ললনার বেশে
আসিতেছে মূখরিতে বনমালা গনে?"
সংবৃত সরসা উৎপল সুন্দরা
প্রকাশিত ভূমালয়ে কাশদলসনে।
গগন ছাইল আজি শ্বেতচ্ছত্ররুপী
নীরদ সাজিছে, যেন প্রজাপতি কেশ
আউলিয়া শোভা দানে ব্যতিব্যস্ত আজি।
হে রুপময়! এ কী কলমে লিখিয়াছ
বিশ্ব সংসারে, আজি বারবার বহে
অমৃতধারা এ ভুবন মাঝারে,কেন
সংঘর্ষ তবু নিখিল আনন্দে জাগে
পরগাছা সম? কালকূট রুপি এবে
সফেন দুগ্ধে যেন এক বিন্দু স্রাব।
(৪)
হে দেবী, তবে কেন রাবণ অসুরে
দিব্যলোক বধিতে ব্যর্থ প্রতি পদে?
অসীম ত্রিলোক জ্ঞান করতলাগতা
তাঁর, কিন্তু লঙ্কাপতি শমন স্বরূপ
আজি দম্ভে, অহংকারে, মাতিছে গৌরবে।
সুবিশাল জ্ঞানরাশি পাণ্ডিত্য লহিয়া
তিনি অতি মহীয়ান বলশালী আজি।
আজ মোর দুখ যত তাহার কারণে।
(৫)
আঁচল অঞ্চল সিক্ত করে চক্ষুজল,
স্নানসিক্ত করে মহা কল্লোলিনী নদী,
কিন্তু মৃত্যু ডাকে পারাবার গরজিয়া,
কহ মাতঃ, নদীজলে আখিঁ জল যায়
কী ধুইয়া? সিন্ধুবারি কভূ নাশে তৃষা?
মিলে কী গঙ্গোদক যমুনার সাথে?
অশ্রু সিঞ্চিয়া রাম আকুল হৃদয়ে
প্রকাশিল আত্নক্লেদ অনুজ সন্মুখে-
(৬)
"রে শর্বরী, সর্বনাশী, বিধির বিধান,
অমানিশা রুপী তুই কোন মায়া বলে,
এ কি ছলে, মোরে অতি তিক্ত বেদনায়
জ্বালাময় করেছিস, দুর্বল হৃদয়ে।
না জানি কেমনে সীতা পল্লব কুটিরে,
সহিছে গঞ্জনা কত ঐ লঙ্কাপূরে।
হায় হায়!! ভাগ্য মোর! কি পাপের ফলে,
এ শাপে দংশে মোরে ধ্বংস করিবারে।
(৭)
ওহে দেবী, অমৃত নয়না, সুভাষিনী
দশভূজা! মন তব স্বর্ণ আঁচলে,
শান্তির ললিত বাণী আকিঞ্চন করি
শোভা এ অঙ্গদে বর্ধিছে সুধীরে।
মাতা মোর! তোমা লাগি অঞ্চল অঞ্জলি
অর্পিব চরণতলে নৈকষেয় নাশি।
অযোধ্যা চন্দ্রোদ্যান পুর্নিব পুনর্বার,
করিব রাক্ষস কূলে বিনাশ সমূলে।
এ প্রতিজ্ঞা মোর আজ চরণ কমলে
তব, এই হেতু আজি অকাল বোধন।
শরতে শারদা শারদীয় প্রাতঃকালে
সংকল্প করি এই ষষ্ঠী প্রভাতে।