|| ভারতী ||
সায়ন
নিভৃতে অন্তরালে তোমারে ভারতী,
পুজিরে আপন জ্ঞান গুণ রুপী ফুলে;
তোমার আশীষ বাণী অমরে অঝরে.
প্রতিদিন যাহে আসে, যেন গো সুধীরে।
যে জন একাকী ভূমে, দুষিছে আপনে
বারে বারে। নেত্রনীরে ধুহিছে শরীরে।
তোমার আশীষ লভি সে আশার লোভে,
জয়ে বাকশক্তি, তব আশীষের তাপে।
তোমা বিনা কে উঠিবে যশের দেউলে!
নিয়ত স্বরূপ তুমি সেথা শৃঙ্গ শিরে,
তোমার সাধনে কত সাধনার প্রাণে,
উর্মিছে জীবন ফেনী, যেন পারাবারে।
বাদিনীরে যে লভিছে সেই জনে জানে,
কি কঠোর তপ সে সাধনে ভজনে,
যে মূর্খ কালিদাস তোমার আশ্রয়ে,
আসীন আজও বর, মহাকবি পদে।
যে জনে দলিছে যারে, আজও ক্ষীণ পদে,
তোমার অভয় বাণী সেই দলিতারে,
করিয়া দেয় রে স্হান যশ-শৃঙ্গ শিরে,
তুমি বিনা কে লভে রে যশের মন্দিরে!
হে ভারতী, বাগদেবী তব মায়াজালে,
মিথ্যা মাতিছে কত তুচ্ছ অহংকারে,
পতনের তরে শীঘ্র বাড়ায়েছে বাহু,
মিথ্যা গৌরবে আর মিথ্যা মায়া তরে।
বলিয়ান আজ যে অতি খ্যাতি যশে,
কিবা নিশ্চয় তার সে প্রতিষ্ঠা রবে,
ক্ষুদ্র অহংকারে আজি যেই জন মাতে,
কাল সেই মহীরুহ ভূমিতে পড়িবে।
মিছে গৌরব হেথা মিছে অহংকার
অর্পণ করেছে যেই, চরণ কমলে
তব। সেই রবে শুধু, মৃত্যু উত্তরে।
বাকি সব কলরবে সুবিলীন হবে।
হে ভারতী, তাই এবে প্রার্থনা তোমে,
অনুকুল, প্রতিকুল বাকশক্তি যত,
ধ্রুব কিবা অধ্রুব আহত, নিহত
নাদ কিবা গীত যত তোমার অধীনে।
অ-আ কারী স্বরবর্ণ, ক-খ আদি ধ্বনি,
ঋক-সাম সুক্ত বা যজুঃ বেদী তথা,
মহাপ্রাণ, স্বল্পপ্রাণ, আ-কার, ই-কারী,
ঐং-বীজ পুটিতা, বীণা বাকবাদিনী।
যে জন তোমারে পূজে, পূজে সে সুন্দরে
তোমার নামেতে; সৃষ্টি মাত্র সুন্দর,
জ্ঞান, বিদ্যা পরিবৃত করুক তাহারে,
সত্ব, সত্য, শ্বেত সদা রহে রে অন্তরে।
শুধু আজি এ মিনতি করি গো ভারতী,
রেখো মোরে সৃষ্টির শৃঙ্গ সিংহাসনে,
সবই দিও, না দিও গো শুধু অহংকার,
বিলীন করিও মাতঃ তব পদতলে।